Back To Blogs | My Blogs | Create Blogs

দিন-রাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল

বান্দার প্রতিটি আমলেরই একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং কৃত পাপের পরিশুদ্ধি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরিয়তকর্তৃক নির্ধারিত এমন কিছু আমল আছে, যা পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি একজন মুমিনের অপরাধ ক্ষমা করা হয়। এখানে দিন-রাতের সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল বর্ণনা করা হলো—

 

অধিক পরিমাণে সিজদা করা

দিন-রাতে অধিক পরিমাণে সিজদা করা আল্লাহর প্রিয় আমল এবং জান্নাতে নবীজির সাহচর্য লাভের বড় মাধ্যম। সাহাবি রাবিআ ইবনে কাআব আল আসলামি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করছিলাম। আমি তাঁর অজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বলেন, কিছু চাও। আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি। তিনি বলেন, এ ছাড়া আরো কিছু আছে কি? আমি বললাম, এটাই আমার আবেদন। তিনি বলেন, ‘তাহলে তুমি অধিক পরিমাণে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৮১)

 

রাতের নামাজ

বিলাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদত আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগ আরোগ্যকারী। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৯)

 

তাওবা ও ইস্তেগফার

দিন-রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, রাতে আল্লাহ তাআলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তাওবা করে। এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন, যেন রাতের অপরাধী তাঁর কাছে তাওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮২)

 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়

প্রতিদিনের নির্দিষ্ট একটি আমল হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা। যারা এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে তার গুনাহ মাফের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে চমৎকার একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবাদের সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়? কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে?’ সাহাবারা জবাবে বলেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবী (সা.) তখন বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মিটিয়ে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৭)

 

তাওবার নামাজ

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যেকোনো ব্যক্তি যদি গুনাহ করে ফেলে, তারপর উঠে পবিত্রতা অর্জন করে কিছু নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৪০৬)

 

প্রতিদিন ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়া

একবার নবীজি (সা.) তাঁর প্রিয় সাহাবাদের বলেন, তোমরা কি প্রতিদিন এক হাজার নেকি লাভ এবং এক হাজার গুনাহ মাফ হওয়ার আমল জানতে চাও? তখন এক সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কী আমল করলে এক হাজার গুনাহ মাফ এবং এক হাজার নেকি লাভ করা যাবে? তখন নবী (সা.) বলেন, ‘১০০ বার সুবহানাল্লাহ বললে এক হাজার নেকি লেখা হবে অথবা (কোনো কোনো বর্ণনা মতে) এক হাজার গুনাহ মোচন হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৮)

 

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করবে, সে  ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু জান্নাত প্রবেশের পথে বাধা হবে না।  (নাসায়ি কুবরা, হাদিস : ৯৯২৮)

 

ফজর ও মাগরিব নামাজের পর নির্দিষ্ট দোয়া

এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিব নামাজের পর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির’ ১০ বার পড়বে, এর বিনিময়ে তার আমলনামায় চারজন গোলাম আজাদ করার সওয়াব লেখা হবে, ১০ নেকি লেখা হবে, ১০ গুনাহ মাফ হবে, ১০ মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং এ কলেমাগুলো সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে হেফাজতের কারণ হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৫১৮)

 

আজান শুনে দোয়া পড়া

বিখ্যাত সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুয়াজ্জিনের আজান শুনে যে ব্যক্তি বলে, ‘আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা-শারিকা লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, রদিতু বিল্লাহি রব্বান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলান, ওয়াবিল ইসলামি দ্বিনান’ তাহলে তার গুনাহ মাফ করা হবে।  (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৭)

 

উত্তমরূপে অজু করা

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অজু করে তখন তার চেহারা ধোয়ার সময় পানির ফোঁটার সঙ্গে চোখের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। যখন হাত ধোয়া হয়, হাতের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। যখন পা ধোয়া হয়, পানির ফোঁটার সঙ্গে পায়ের দ্বারা কৃত গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। এভাবে বান্দা গুনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৪৪)

মহান আল্লাহ আমাদের আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।

 


Shakib Khan

106 Blog Postagens

Comentários
Normal People 45 C

মাশাআল্লাহ খুব ভালো পোষ্ট