Back To Blogs | My Blogs | Create Blogs

সত্ভাবে ব্যবসা করা ইবাদত

মুসলমানের গোটা জীবনই হতে পারে পুণ্যময়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর অনুগ্রহে আমাদের এমন একটি দ্বিন দান করেছেন, যার মধ্যে মানবীয় প্রয়োজনের কোনো দিককেই অবহেলা বা উপেক্ষা করা হয়নি। পবিত্র কোরআনে পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির যে উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো, আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি মানুষ ও জিনকে আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছি। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

মানুষকে সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্যই যখন এই ইবাদত করা, তখন কর্তব্য ছিল, মানুষ সকাল-সন্ধ্যা, দিবারাত্রি আর কোনো কাজ করবে না, শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম অনুগ্রহে মানুষ সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও তাকে তার মানবীয় প্রয়োজন পূরণ করারও অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ সে নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবনোপকরণ এবং বসবাসের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা এমন এক দ্বিন আমাদের দান করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের সব চাহিদা পূরণ করতে পারি। শুধু প্রয়োজন পূরণ পর্যন্তই শেষ নয়; বরং এগুলোকে নেক আমলেও পরিণত করতে পারি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন এক দ্বিন দান করেছেন, যার মধ্যে যদিও জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে ইবাদত করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সব কায়-কারবার ছেড়ে দিয়ে বসে যাও। বরং এমন এক আদর্শ আমাদের দিয়েছেন, যার মাধ্যমে জীবনের নানাবিধ প্রয়োজনও পূরণে বাধা থাকে না, আয়-উপার্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুই গতিশীল থাকে। শুধু যে গতিশীল থাকে এমন নয়; বরং ব্যবসা একটি নেক আমলের রূপ লাভ করে।

সৎ ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবী ও সিদ্দিকিনের সঙ্গে

এটা হতে পারবে না যে ব্যবসায় মত্ত হয়ে নিজের ধর্মীয় কর্তব্যের কথা ভুলে যাবে। বরং মুসলমানের কর্তব্য হলো, আল্লাহকে স্মরণ রাখা ও হালাল পদ্ধতিতে আয়-উপার্জনের চেষ্টা করা। হাদিস শরিফে এসেছে, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস ১২০৯)

ব্যবসা যখন আমানতদারি, বিশ্বস্ততা ও সততার সঙ্গে করা হবে, তখন এটি নেক আমলে পরিণত হবে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও ব্যবসা করেছেন। বরং তিনি ব্যাপক পরিসরে ব্যবসা করেছেন। যাকে আজকাল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (ওহঃবত্হধঃরড়হধষ ঃত্ধফব) বলা হয়। এ অঙ্গনে তিনি আমাদের জন্য অনেক আদর্শ রেখে গেছেন। যদি ঈমানদারি, আমানত ও সততা আমাদের মধ্যে এসে যায়, তাহলে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড নেক আমলে পরিণত হবে।

ভারতবর্ষে ইসলাম এসেছে আরব বণিকদের মাধ্যমে

ভারতবর্ষে বর্তমানে বিপুলসংখ্যক মুসলমান। এ ভূখণ্ডে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারকারীরা মুজাহিদ ছিলেন না যে জিহাদের মাধ্যমে তাঁরা এখানে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছেন। কোনো তাবলিগি জামাতও এখানে আসেনি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে। এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারকারী ছিলেন কিছুসংখ্যক সাহাবি ও তাবেঈ, যাঁরা ব্যবসায়ী বেশে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁরা নিজেদের ব্যবসার মাধ্যমে এমন সুমহান আদর্শ স্থাপন করেছিলেন যে এ অঞ্চলের মানুষের অন্তরে তাঁদের প্রতি সীমাহীন অনুরাগ জন্ম নেয়। ফলে ইসলামের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে এবং ইসলামকে তারা একটি শ্রেষ্ঠ দ্বিনরূপে গ্রহণ করে নেয়।

ব্যবসা করার সুবর্ণ সুযোগ

আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগ্রহে মুসলিম-অমুসলিম-নির্বিশেষে একটি দেশ ও সমাজে বসবাস করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই মানুষের সামনে নিজেদের কর্মের সর্বোত্তম নমুনা পেশ করলে, তাদের সঙ্গে আন্তরিক ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করলে, তাদের সঙ্গে সৎ এবং ন্যায়সংগত লেনদেন করলে এই ব্যবসা কেবল ব্যবসাই থাকবে না; বরং একটি দাওয়াতে পরিণত হবে। এবং এর একেকটি মুহূর্ত আল্লাহ তাআলার দরবারে সওয়াব ও প্রতিদান লাভের কারণ হবে। প্রতিনিয়ত অমুসলিমদের সঙ্গে আমাদের উঠাবসা হয়। কিন্তু আমাদের এ বিষয়টি মনে থাকে না যে আল্লাহ তাআলা একজন মুসলমান হিসেবে আমাকে দ্বিনের একজন দাঈ (ধর্মপ্রচারক) বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। সমগ্র মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব...। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)। তাই নিজেদের কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে অমুসলিমদের কাছে টানুন। তাদের সহমর্মী হোন। তাদের দুঃখ-দুর্দশায় শরিক হোন। এভাবে তাদের ইসলামের দাওয়াত দিন।

ব্যবসা অন্য পেশার চেয়ে শ্রেষ্ঠ

কোরআন ও হাদিসে ব্যবসার ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে মনে হয়, ব্যবসা করা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আমরা ব্যবসার মাঝে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের একটি শিক্ষা খুঁজে পাই। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা ব্যবসার পেশাকে অন্যান্য পেশার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। শুধু শর্ত একটি। আর তা হলো, শরিয়ত ও সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। ব্যবসায় মগ্ন হয়ে কিছুতেই আল্লাহ থেকে গাফিল হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Rajjohin Raja  

116 Blog posts

Comments