Back To Blogs | My Blogs | Create Blogs

‘বিশ্বসেরা’ বার্সেলোনা নিজেদের ইতিহাসেরই অন্যতম বাজে দল

রেকর্ডের খাতায় তাদের পারফরম্যান্স বার্সেলোনা ইতিহাসের অন্যতম বাজে বলেই লেখা থাকবে।

বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের কোয়ার্টার ফাইনালে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে ছিল একদল। দুই দলই পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন, ফলে ইতিহাস এ ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু ফর্ম বলছিল, গতকালকের ম্যাচে বায়ার্নই ফেবারিট। দলটির সবচেয়ে কড়া সমর্থকও হয়তো মেনে নিয়েছিলেন সেটা।

আর্তুরো ভিদাল মানেননি। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলা জেনেও নিজেদের পক্ষেই ঢোল বাজিয়েছেন। তাঁর দাবি, বায়ার্নের আত্মবিশ্বাস থাকতে পারে কিন্তু বিশ্বের সেরা দল বার্সেলোনার সঙ্গে খেলতে নামবে ওরা। বৃহস্পতিবার রাতের এই দম্ভ গতকাল প্রমাণ করার দায় ছিল ভিদালদের। কারণ, ফর্ম বলছিল বিশ্বের সেরা তো দূরে থাক করোনা বিরতির পর স্পেনেরই সেরা দল নয় বার্সেলোনা। ১১ ম্যাচ হাতে রেখে দুই পয়েন্ট এগিয়ে থাকা বার্সা শেষ পর্যন্ত এক ম্যাচ আগেই লিগ হেরে বসেছিল। ওদিকে সব প্রতিযোগিতা মিলে গত ২৭ ম্যাচের ২৬ টিতেই জয়ী বায়ার্ন মিউনিখ। ফর্মের চূড়ান্তে থাকা দল বলতে চাইলে উদাহরণ হিসেবে হানসি-ডিয়েটের ফ্লিকের দলকেই বোঝায়।

এমন এক দলের বিপক্ষে জিততে হলে দুটি কাজ করতে হতো, বার্সেলোনাকে মৌসুমের সেরা খেলা দেখাতে হতো। ওদিকে বায়ার্নকে ফিরে যেতে হতো মৌসুমের প্রথম দিককার ফর্মে। কোনোটিই হয়নি। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ একাদশ নিয়ে নামা বার্সেলোনাকে গতিময় ফুটবলে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে বায়ার্ন। স্কোরলাইনটা ৮-২ দেখাচ্ছে বটে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে বায়ার্নের আক্রমণভাগ ভুল না করলে গোল আরও আধ ডজন বাড়তেও পারত।

এমন দাপুটে লড়াই বা বার্সেলোনার প্রেক্ষাপটে অসহায় আত্মসমর্পণ খুব কমই দেখা যায়। বিশেষ করে এমন দুই পরাশক্তির ম্যাচে। ম্যাচের শুরু থেকে এতটাই দাপুটে ছিল বায়ার্ন যে সাত মিনিটে আত্মঘাতী গোল করার পরও ডেভিড আলাবার মুখে হাসি দেখা গিয়েছিল। ম্যাচের একত্রিশ মিনিটের মধ্যে ৪ গোল করে তাঁর সতীর্থরাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন ওই হাসি দেখেও কেউ আপত্তি জানাননি।

৩১ মিনিটে মুলারের ওই গোলে অস্বস্তিকর এক রেকর্ডে নাম জড়াল বার্সেলোনার। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউটের কোনো ম্যাচে প্রথমার্ধেই চার গোল খেল কেউ। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা বায়ার্নের খেলায় একটু আয়েশি ঢং না এলে পোর্তোর মতো পাঁচ গোল হজম করতেও পারত বার্সেলোনা। সেবারও কোয়ার্টার ফাইনালে লেভানডফস্কিরা প্রথমার্ধেই দিয়ে বসেছিলেন ৫ গোল।

সর্বকালের রেকর্ডে ভাগ না বসালেও নিজেদের রেকর্ড ভাঙতে তো আপত্তি নেই! গোল উৎসবে আধা ঘণ্টা বিরতি ছিল বায়ার্নের। ৬৩ মিনিটে আলফন্সো ডেভিস একাই পুরো বার্সা রক্ষণকে ঘোল খাইয়ে দিলেন। কিমিখের গোলে পঞ্চম গোল খেল বার্সেলোনা।

নকআউট পর্ব ভুলে যান, চ্যাম্পিয়নস লিগও ভুলে যান। ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতাতেই বার্সেলোনার পাঁচ গোল খাওয়ার রেকর্ডটি ৪৪ বছর পুরোনো। ১৯৭৬ সালে উয়েফা কাপের (বর্তমান ইউরোপা লিগে) কোয়ার্টার ফাইনালে বুলগেরিয়ার লেবস্কি সোফিয়ার মাঠে ৫-৪ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা।

ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে অপেক্ষা করছি বাকি লজ্জা। ধারে খেলতে যাওয়া ফিলিপে কুতিনহোর পাস থেকে ষষ্ঠ গোল দিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। ৮৫ মিনিটে কুতিনহো নিজেও করলেন আরেকটি। সাত গোল! আবার রেকর্ড নিয়ে টানাটানি। এবার জানা গেল বার্সেলোনা সর্বশেষ সাত গোল খেয়েছিল যে প্রতিযোগিতায় এখন আর তার অস্তিত্বই নেই। চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে বর্তমান স্প্যানিশ সুপার কাপের ভিন্ন এক রূপ হাজির হয়েছিল সাত বছরের জন্য। সেই কোপা এভা দুয়ার্তের ফাইনালে ১৯৪৯ সালে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ৭-৪ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা।

কিন্তু কুতিনহোর যে তখনো স্বাদ মেটেনি। ৮৮ মিনিটে এল অষ্টম গোল। তাতে বার্সেলোনার ইতিহাস নিয়ে আরও তিন বছর ঘাটার সুযোগ হলো। জানা গেল ১৯৪৬ সালের কোপা ডেল রের শেষ ষোলোতে সেভিয়ার মাঠে ৮-০ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। গত ৭৪ বছরে সে ম্যাচ ইতিহাসের আরও মহাগুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচের আড়ালে চলে গিয়েছিল।

কে ভেবেছিল, লিওনেল মেসিকে সাক্ষী রেখে এমন এক ম্যাচ উপহার দেবে বার্সেলোনা! ঘরোয়া লিগের ইতিহাসে গত এক দশকে নিজেদের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সের পরও নিজেদের বিশ্বের সেরা দল দাবি করেছিলেন ভিদাল। কিন্তু রেকর্ডের খাতায় তাদের পারফরম্যান্স বার্সেলোনা ইতিহাসের অন্যতম বাজে বলেই লেখা থাকবে।


Akash Ahmed  

124 Блог сообщений

Комментарии