অতিমারি হানা দিলে পাল্টে যায় জীবনযাত্রা। মৃত্যু ও বেঁচে থাকার আকুতি চলে পাশাপাশি। এর মাঝে কেউ কেউ জীবনও গড়েন। তাতে ভাগ্যক্রমে অতিমারির ভূমিকাও থাকে। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে তোবি জুনিয়রের গল্প শুনুন।
চীনের দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে গত জুলাইয়ে অভিষিক্ত হন তোবি। ২৫ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ডের পেশাদার ফুটবলে পা রাখতে ঘুরতে হয়েছে তিন মহাদেশ। তবে অস্বাভাবিক বিষয় হলো, তোবির ফুটবলার হয়ে ওঠায় অবদান রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির।
চাইনিজ লিগ ওয়ানে জিয়াংজি লিয়ানশেনে খেলেছেন তোবি। প্রাথমিকভাবে তাঁর সঙ্গে ছয় মাসের চুক্তি করেছে ক্লাব। তোবি এই চুক্তিপত্র সংবাদমাধ্যমকে দেখিয়েছেন গর্ব নিয়ে। জানালেন, ফুটবলার হয়ে উঠতে তাঁর যাত্রা শুরু পশ্চিম আফ্রিকা থেকে; জন্মভূমি আইভরি কোস্ট। গ্রিস এবং ইংল্যান্ডে কিছুদিন থাকার পর এখন চীনে তোবি ভিড়িয়েছেন জীবনের তরী।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে আট ধাপ নিচের লিগে খেলা উডফোর্ড টাউনেও কিছুদিন ছিলেন তোবি। অপেশাদার লিগে খেলে থাকে উডফোর্ড। এ ছাড়াও সাংহাইতেও অপেশাদার একটি দলে খেলেছেন। এখানে বৃত্তি নিয়ে ছাত্রজীবনও কেটেছে তাঁর। পরে গত জুনে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ে। তোবির ভাষায়, ২০১৪ সালে চীনের উদ্দেশে আইভরি কোস্ট ছাড়েন। লেখাপড়া ও চৈনিক ভাষা শেখা তখন প্রধান লক্ষ্য থাকলেও মনে মনে তিনি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নও দেখেছেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপির সঙ্গে ভিডিও আলাপচারিতায় তোবি বলেন, অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো (চীনে) আমাকে কিছু বিদেশি বলেছিল অপেশাদার খেলোয়াড় কিংবা কোনো ছাত্রের পেশাদার জগতে পা রাখা অসম্ভব। আমি বলেছিলাম এটা তোমাদের কাছে অসম্ভব মনে হতে পারে। আমার জন্য সম্ভব, কারণ আমি জানি আমি কে। তোবির ভাষায়, ফুটবলার হতে এজেন্ট ও ম্যানেজারদের হাজারো মেইল পাঠিয়েছি। কিন্তু এই জগৎটা অসৎ, ফুটবলার হতে মরিয়া হয়ে ওঠাদের তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তারা বলেছে,পেশাদার ফুটবলার হতে আমাকে অনেক অনেক দূর যেতে হবে, তাই সাহায্য করতে পারছি না। কেউ কেউ তো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখাই বাদ দিতে বলেছে-বলেন তোবি।
কিন্তু তোবি মোটেও দমে যাননি। যদিও জিয়াংজিতে তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় ৫ হাজার ঘরোয়া ভক্তের এক পেশাদার ক্লাব কেন তোবির মতো অপেশাদার ও ছাত্র পর্যায়ে খেলা কাউকে দলে টানবে? করোনার ভেলকিটা ঠিক এখানেই। গত বছরের শেষ দিকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এ ভাইরাস। চীনে তখন সবাই আতঙ্কিত। অনেকেই দেশ ছাড়ছিলেন। কিন্তু তোবি চীনকে নিজের ঘর মনে করে থেকে যান। সবাই তখন পড়িমরি করে চীন ছাড়ছিল। আমার পরিবার ও পরিচিতরাও চীন ছাড়ার কথা বলেছিল আমাকে। কিন্তু আমি বলেছি, কোথাও যাব না। চীন আমাকে নিজের স্বপ্ন বুঝতে শিখিয়েছে।
গত মার্চে বিদেশ থেকে লোক আসাতেও বিধিনিষেধ আরোপ করে চীন। বাইরের কোনো সংক্রমণ দেশে ঢোকাতে চায়নি তারা। এতে চাইনিজ ফুটবলে বিদেশি ফুটবলারের সংখ্যা কমে যায়। চুক্তি পেতে প্রতিযোগীর সংখ্যাও কমে। তোবি ঠিক এ সুযোগটাই নিয়েছেন। জিয়াংজির জ্যেষ্ঠ অফিশিয়াল জাই ইয়াওহুই জানান, তারা একজন ব্রাজিলিয়ান ও সুইস ফুটবলার নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তা হতে দেয়নি। এরপর এক এজেন্টের মাধ্যমে তোবির খোঁজ পায় জিয়াংজি।
তখন চাইনিজ ক্লাবটির হাতেও বিকল্প ছিল না। এদিকে তোবির মানসিকতা রুডি সিনেমার মূল চরিত্রের মতো। খেলার জন্য ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। ইংল্যান্ডের এক কোচ তোবিকে বলেছিলেন, সে আমার দেখা সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমী ফুটবলার। অনুশীলনে তোবির নিবেদন ও দক্ষতা দেখে সন্তুষ্ট হয় জিয়াংজি। বাকিটা চুক্তিপত্রে। জাইয়ের মতে, ফুটবল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। সে (তোবি) যত দিন খেলতে চায় আমরা সাহায্য করতে আগ্রহী।