Back To Blogs | My Blogs | Create Blogs

ঘরবন্দী সময় কাটান অন্য রকম

হঠাৎ করেই এল এই অজানা অদৃশ্য শত্রুর হানা। এরপর একসময় হতে হলো ঘরবন্দী। স্কুলকলেজ বন্ধ। চার দেয়ালের মধ্যে আটকে গেল জীবন।

খবরের কাগজ, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ফেসবুকপর্দা বা স্ক্রিনে চোখ আটকে যাওয়াও একসময় একঘেয়ে হয়ে আসে। সে সঙ্গে বাড়ে দুর্ভাবনা, অনিশ্চয়তা, মনের অস্থিরতা।

একটু অন্য রকম হোক নয়া জীবন। দিনলিপি ছকে বাঁধা হোক ভালো করে। স্নান, খাওয়া, ঘুম হোক নিয়ম করে। নিয়ম মেনে। হোক প্রচুর পানি পান, ঘরের ভেতরে একটু ব্যায়াম। ঘাম ঝরলে ভালো। বন্ধু আর প্রিয়জনের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা হোক।

অনলাইন গেম, নেটফ্লিক্স আর কত? স্ক্রিন টাইম মানে পর্দায় কাটানো সময়ও একঘেয়ে হচ্ছে।

স্মার্টফোনের ডিজিটাল পর্দায় এত নির্ভরতা কেন? চলন্ত অক্ষরে চলতে চলতে চোখও বিদ্রোহ করে।

কতদিন ঘরের বাইরে পা ফেলা হয়নি। অনেকে ইউটিউবে দেশবিদেশে মনে মনে ভ্রমণ করছেন। মন হোক মেঘের সঙ্গী।

ঘরে ভালোমন্দ রান্না করুন স্বামীস্ত্রী মিলে। অনেকের ঘরবন্দী বিনোদন হলো ঝগড়া। তবে তা যেন ক্ষণকালের হয়, আর এরপর মিটমাট। মধুর বচন। অভিমান ভেঙে খানখান। অনেকের পুরোনো প্রেম খুঁজে পেতে পারে নতুন ভাষা। গাঘেঁষাঘেঁষি না করেও প্রেম উদ্যাপনযাপিত জীবনে নতুন আবিষ্কার।

নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান হতে পারে ভার্চ্যুয়ালি। গাঁটছড়া বাঁধার অনুষ্ঠান এখন বন্ধ প্রায়, তবে অনলাইন ম্যাট্রিমনি চলতেই পারে। পাত্র খোঁজাখুঁজি আর পছন্দ হলে ফোনালাপ, একে অপরের সঙ্গে মিলঅমিল ঝালিয়ে নেওয়া।

পরিবারকে কাছে পেলেন, আর সেই পাওয়া যেন মধুর হয়। ভালোমন্দ ভাগ করে নেওয়ার অনেক সময় পাওয়া গেল। সবার সঙ্গে থাকাটা যেন হয় কোয়ালিটি টাইম।

ঘরবন্দী সময়ে অনেকেরই প্রিয় সঙ্গী হতে পারে বই। বই কিনে রেখেছেন পড়া হয়নি, পড়ে ফেলুন। নয়তো ট্যাবে নামিয়ে নিন পছন্দের বই।

এ সময় বাড়ির কাজ আর বাড়িতে থেকে কাজ দুটোর মধ্যে মিল রাখতে হয়। সবার সহযোগিতা চাই সে জন্য।

নিজের পুরোনো প্রতিভা, পুরোনো বন্ধুত্ব চাঙা করার সময় এখন। মন দিন সেদিকে, চাপ কমবে। ছবি আঁকা, গান করা, চুলের নতুন কেতা তৈরি করা। অনেকে করোনাভাইরাসের আদলে সাজান চুল, অন্য রকম কদম ফুল। সৃজনশীল খেয়ালকে উসকে দেওয়ার সময় এখন। শিল্প সৃষ্টি চলুক, প্রতিভা ডানা মেলুক। ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ঘরবন্দী হওয়ার কাল শেষ হবে একদিন, আর এসব কর্ম হবে স্মৃতি।

কিন্তু উৎসব? চড়া রোদ, ঘামে ভেজা শরীর, ভিড়। খোঁপাতে গোঁজা ফুল। সে উৎসব ধরা দিক ঘরে নিজের মনের মাধুরী হয়ে। গান গাওয়া ঝালিয়ে নিন। স্নানঘরে হলেও মন্দ কি? বাড়ির ছাদে বা বসার ঘরে হোক না উৎসব।

কিছু সময় দিন প্রকৃতিকে, বাইরে বারান্দায়, তবেই দেখবেন যে গাছের পাতা ঘন হয়ে উঠেছে, নীল আকাশে মেঘের ভেলা। বারান্দার একচিলতে জায়গায় কিংবা ছাদে বাগান করুন, টবের গাছগুলোর যত্ন নিন। দেখবেন ছোট ছোট এসব দিচ্ছে বিস্তর আনন্দ। পথের বাঁকে অজানা ভয়, তাতে কী, ভয়কে করুন জয়। পুরোনো ইচ্ছাগুলো উসকে দিন। আঁকুন, গান করুন, যন্ত্রসংগীত শিখুন, শিখুন বিদেশি ভাষা। একদিন আসবে সুদিন, সময় অপেক্ষার। সৃজনশীলতার সঙ্গে সচেতনতার পাঠ হোক। অনেক তরুণ অ্যানিমেশন ছবি তৈরি করছেন। চমৎকার। করোনা সচেতনতা নিয়ে।

বুঝবেন এবার, জীবনের চাহিদা অনেক কম, আমরা শুধু একে প্রাচুর্যের ভারে তাকে নত করি। শিখুন নতুন খেলা বা কৌশল, দাবা, পিয়ানো, ফরাসি ভাষা। অনলাইনে কোর্স করতে পারেন, ধ্যানচর্চা, যোগব্যায়াম। করুন শব্দজব্দ, সুডোকো, ক্রসওয়ার্ড, পাজল।

সেরে উঠুক হে পৃথিবী। বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চাই। এই তো সুড়ঙ্গের শেষে আলোর রেখা দেখি।


Akash Ahmed  

124 Blog des postes

commentaires