কি কারনে আপনার ডাটা গুলোকে আজই ব্যাকআপ করবেন? ৭টি ফ্রী অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ সার্ভিস!

Comments · 2244 Views

বর্তমানে আমরা সবাই আমাদের প্রয়োজনীয় ডাটা কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে সেভ করে রাখি। আর নিশ্চিন্তে বসে থাকি। কিন্

বর্তমানে আমরা সবাই আমাদের প্রয়োজনীয় ডাটা কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে সেভ করে রাখি। আর নিশ্চিন্তে বসে থাকি। কিন্তু আপনি জানেন কি? যেকোন সময় আপনার কম্পিউটার এর হার্ড ডাইড ক্র্যাস হয়ে যেতে পারে। আর আপনার শান্তিতে বসে থাকা দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়ে যাবে। এই পোষ্ট এ আমি ডাটা ব্যাকআপ এর প্রয়োজনীয়তা এবং কিছু ফ্রী অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ সার্ভিস সম্পর্কে জানাবো। পোষ্টটি অনেক বড় হবে তাই একটু ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

ডাটা ব্যাকআপের প্রয়োজনীয়তা

কম্পিউটার হার্ড ডাইভ কিছু সময়ের জন্য ডাটা সংরক্ষণ এর জন্য ভালো। বিশেষ করে আপনি যে ডাটা গুলো প্রতিদিন অ্যাক্সেস করেন। কিন্তু যে ডাটা গুলো আপনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যে ডাটা গুলো আপনি অনেক বছর ধরে সংগ্রহ করতে চান, সেই ক্ষেত্রে কম্পিউটার হার্ড ডাইভ সঠিক পছন্দ হতে পারে নাহ। কারণ কম্পিউটার হার্ড ডাইভ কখন নষ্ট হয়ে যাবে তার কোন গ্যারান্টি নায়।

এছাড়াও অনেক সময় আপনার অতি প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বিভিন্ন কম্পিউটার ম্যালওয়্যার দ্বারা। এখন মুটামুটি সবায় কম্পিউটার দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাই যেকোন সময় কম্পিউটার এ ইন্টারনেট থেকে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এখন অনেক টাইপের ম্যালওয়্যার আছে, যারা বিশেষ করে আপনার কম্পিউটারের ডাটা গুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই তৈরী। আপনি র্যানসমওয়্যারের নাম নিশ্চয় শুনেছেন; এটি আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে সকল ডাটা গুলোকে এনক্রিপ্টেড করিয়ে দেয়। এনক্রিপশন হলো এক কম্পিউটারের ভাষা যেটি সাধারণ ফাইলকে উলটাপালটা করে ফেলে। আপনার কম্পিউটারে যদি ্যানসমওয়্যারের প্রবেশ করে, এর সাথে লাগানো যেকোনো হার্ড ড্রাইভ বা ইউএসবি ড্রাইভের ডাটা গুলোও এনক্রিপটেড হয়ে যাবে। আর সেই ডাটা গুলোকে ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সাথে আপনার ল্যাপটপ যেকোনো সময় চুরি হয়ে যেতে পারে, কিংবা কেউ কম্পিউটার থেকে হার্ড ড্রাইভ বেড় করে নিয়ে যেতে পারে, এতে সমস্ত ডাটা গুলো হারিয়ে ফেলবেন।

এখন অনেক বড় বড় কম্পানি তাদের ডাটা গুলো সংগ্রহ করে রাখার জন্য মসে কয়েক লক্ষ ডলার খরচে করছে। আশা করি আপনি এখন বুঝে গেছেন ডাটা সংগ্রহ কথটা দরকারী। কিন্তু কিভাবে সংগ্রহ করবেন? চিন্তা করার কোন কারণ নেই এই পোষ্ট এ আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ডাটা সংগ্রহের জন্য সঠিক পদ্ধতি

আমি বলব ডাটা সংগ্রহের জন্য সঠিক পদ্ধতি হল অফলাইন ষ্টোর। কিন্তু হার্ড ডাইন কখনো অনেক সময় ধরে ডাটা সংগ্রনেরর সঠিক পদ্ধতি হতে পারেহ নাহ। তা মনে হয় উপরের লিখাগুলো পড়েই বুঝে গেছেন। অফলাইন এ ডাটা সংগ্রহের জন্য বেষ্ট হচ্ছে ডিভিডি।কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভ থেকে ডিভিডি অনেক বেশি সময়ের জন্য ফেইল না হয়ে ডাটা সংরক্ষিত রাখতে পারে। তাই আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোকে ডিভিডিতে ব্যাকআপ রাখা বেস্ট হবে। যদি ডাটার সাইজ অনেক বেশি হয়, সেক্ষেত্রে ব্লু-রে ডিস্ক ইউজ করা বেস্ট হবে। একটি সিঙ্গেল ব্লু-রে ডিস্কে ৫০-১২৮ জিবি পর্যন্ত ডাটা স্টোর করতে পারবেন। সাথে অবশ্যই আপনার ডাটা গুলোর অনেক গুলো কপি তৈরি করুণ। একটি কপি বানিয়ে নিশ্চিন্ত হবেন না। যদি ডাটা গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তো ডাটা গুলোকে অনেকগুলো কপি করিয়ে তবেই ডিস্ক রাইট করুণ।

অনলাইন ডাটা ষ্টোর

যেহেতু আজকে ইন্টারনেটের যুগ, তাই আমরা অনলাইন থেকেই সকল সুযোগ সুবিধা গুলোকে পেতে চাই। তাই অফলাইন ম্যাথডের পরে, সবচাইতে জনপ্রিয় ম্যাথড হচ্ছে অনলাইন ব্যাকআপ করা। অনলাইন ব্যাকআপ রাখার মাধ্যমে আপনি যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় আবার ডাটা গুলোকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। যেকোনো কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ডাটা গুলোকে রীড করতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ডিভাইজের সাথে একসাথে ডাটা গুলোকে সিঙ্ক করতে পারবেন।

যদি আপনার খুববেশি ডাটা ব্যাকআপ রাখার প্রয়োজন না হয়, তবে অনেক ফ্রী অনলাইন সার্ভিস রয়েছে যাদের কাছে আপনি ডাটা ব্যাকআপ রাখতে পারবেন। তারা লাইফ টাইমের জন্য আপনার ডাটা গুলোকে ব্যাকআপ রাখবে। তাদের কাছেও আপনার ডাটার আরো আলাদা কপি থাকে, যাতে কোন কারণে সার্ভার হার্ড ড্রাইভ ক্র্যাস করলে আপনার ডাটা গুলোকে হারিয়ে ফেলতে ন হয়। তবে অনলাইন ব্যাকআপ রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে কোম্পানি নির্বাচন করবেন সেটি বিশ্বস্ত হতে হবে। তা না হলে, আপনার ডাটা গুলো গায়েব করে কোম্পানি পালিয়ে যাবে, আর আপনাকে পড়তে হবে আরেক অসুবিধায়। তবে আরেকটি কথা, আপনার ডাটা গুলো যদি প্রচণ্ড সেনসিটিভ হয়, তাহলে অনলাইন ব্যাকআপ না রাখায় ভালো, অনলাইনে অনেক সময় প্রাইভেসির সমস্যা হতে পারে, তাছাড়া সিকিউরিটি রিস্কও থাকে।অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ রিস্ক গুলো সম্পর্কে জানতে এই টিউনটি দেখুন!

৭টি ফ্রী অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ সার্ভিস

অনলাইনে অনেক ডাটা ব্যাকআপ রাখার সার্ভিস রয়েছে, যারা ফ্রী ডাটা ব্যাকআপ প্ল্যান প্রদান করে থাকে। যেহেতু ফ্রী, তাই অবশ্যই প্রিমিয়াম কোন কিছুর মতো আশা না রাখায় ভালো। ফ্রী প্ল্যানে সব সময় ডিস্ক লিমিটেশন থাকে। তবে আপনার যদি মাত্র ১০-১৫ জিবি ডাটা ব্যাকআপ রাখা প্রয়োজনীয় হয়, পেইড প্যান পারচেজ করার কোনই দরকার নেই। যদি আপনার বিজনেসের জন্য বা বেশি পরিমানে ডাটা ব্যাকআপ করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই পেইড প্ল্যান কেনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

১/ গুগল ড্রাইভ (Google Drive)

নাম শুনেই চিনে ফেলেছেন তাই না। গুগলের উপর যদি ভরসা না রাখেন তো আর কাকে ভরসা করবেন, বলুন?গুগল ড্রাইভআপনাকে ফ্রী ১৫ জিবি স্পেস প্রদান করে অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ করার জন্য। তবে এই স্পেস জিমেইল, গুগল ফটো, এবং ড্রাইভের মাঝে শেয়ার করা থাকে। যাই হোক, এটি অন্তত ড্রপবক্সের ফ্রী ২জিবি থেকে অনেক বেশি ভালো। সাথে আপনি কম্পিউটার, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস সব কিছু থেকেই ডাটা ব্যাকআপ, অটো-ব্যাকআপ, অ্যাক্সেস, এবং সিঙ্ক করতে পারবেন। যদি আপনি ফ্রী ব্যাকআপ প্ল্যান আর একসাথে বহু সুবিধার কথা ভেবে থাকেন, অবশ্যইগুগল ড্রাইভ আপনার প্রথম পছন্দ হবে। গুগল ড্রাইভে আপনি যেকোনো টাইপের ফাইল স্টোর করতে পারবেন।

২/ মিমিডিয়া (MiMedia)

মিমিডিয়াআপনাকে ফ্রী ১০ জিবি ডাটা ব্যাকআপ প্ল্যান প্রদান করে এবং গুগল ড্রাইভের মতো এখানেও আপনি অটো-ব্যাকআপ গ্রহন করতে পারবেন। মিমিডিয়ার একটি সমস্যার দিক হচ্ছে, এটি কেবল ফটোস, মিউজিক, মুভি, ভিডিও স্টোর করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন, কিন্তু জিপ ফাইল বা ইএক্সই ফাইল গুলোকে এখানে স্টোর করতে পারবেন না। যাই হোক, অন্তত মিডিয়া ফাইল গুলোকে স্টোর করার জন্য মিমিডিয়া বেস্ট চয়েজ। আমি নিজেও এখানে ৫ জিবির মতো ডাটা ব্যাকআপ করে রেখেছি, ডাটা আপলোড এবং ডাউনলোড স্পীড অনেক ফাস্ট। তাছাড়া মোবাইল অ্যাপ এবং ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, ফাইল আপলোড করার জন্য।

৩/ আইড্রাইভ বেসিক (IDrive Basic)

আইড্রাইভ বেসিকপ্ল্যান আপনাকে ফ্রী তে ৫জিবি ডাটা অফার করে অনলাইন ফাইল স্টোর করার জন্য। অন্যান্য যতো সকল অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ সার্ভিস রয়েছে, প্রত্যেকটি সুবিধা আপনিআইড্রাইভ প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট থেকে পেয়ে যাবেন। তবে ফ্রী অ্যাকাউন্টেও আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন। এরা আনলিমিটেড ডিভাইজ সমর্থন করে, অর্থাৎ আপনার বাড়ির যতো গুলো ডিভাইজ রয়েছে, সকল ডিভাইজ থেকে ফাইল আপলোড করতে পারবেন একটি অ্যাকাউন্টের অধীনে, শুধু ৫জিবি পর্যন্ত লিমিট থাকবে।

৪/ জটাক্লাউড (Jottacloud Free)

জটাক্লাউডআপনাকে ৫জিবি পর্যন্ত ফ্রী ক্লাউড স্পেস প্রদান করে, কিন্তু আপনি যদি আপনার ফ্রেন্ডদের রেফার করেন, সে ক্ষেত্রে ১০০ জিবি পর্যন্ত ফ্রী স্পেস পেতে পারবেন। আলাদা যেকোনো ব্যাকআপ সার্ভিসের মতো এদের থেকেও আপনি সকল সুবিধা পাবেন, সাথে এরাও আনলিমিটেড ডিভাইজ সমর্থন করে। আর এদের প্রিমিয়াম প্ল্যানও রয়েছে। এদের সার্ভার নরোয়েতে অবস্থিত। উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএসকে আরামে সমর্থন করে।

৫/ মেমোপাল (Memopal)

মেমোপাল ৩জিবি ফ্রী স্পেস প্রদান করে, এবং সাথে আপনি অগুনতি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন। এদের সফটওয়্যার যেকোনো মোবাইল এবং যেকোনো কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন করে। তাই নো টেনশন।

৬/ মজিহোম (MozyHome Free)

মজিহোম, ২জিবি ফ্রী স্পেস প্রদান করে থাকে, তবে ফ্রেন্ডদের রেফার করার মাধ্যমে আপনি আরো ৫জিবি আলাদা স্পেস অর্জন করতে পারবেন, আর একত্রে আপনার হবে ৭জিবি ব্যাকআপ স্পেস। এরা ফ্রী অ্যাকাউন্ট এবং প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে একই সার্ভিস দিয়ে থাকে। সাথে উইন্ডোজ এবং ম্যাকে এদের সফটওয়্যার সমর্থন করে।

৭/ এলিফ্যান্ট ড্রাইভ (ElephantDrive Lite Edition)

এলিফ্যান্ট ড্রাইভ ফ্রীতে ২জিবি অনলাইন ব্যাকআপ সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এদের ফ্রী সার্ভিসে অনেক ভালো ফিচার রয়েছে, সাথে এদের প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্টে অনেক স্ট্রং এনক্রিপশন ব্যবহার করে আপনার ডাটা গুলোকে সিকিউর করা হয়। এরা ৩টি পর্যন্ত কম্পিউটার সমর্থন করে, একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এবং অবশ্যই এদের অটো-ব্যাকআপ সিস্টেম রয়েছে।

আশা করছি, এই টিউনটি আপনার জন্য অনেক সাহায্যপূর্ণ ছিল। আপনি ডাটা ব্যাকআপ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানলেন, ডাটা ব্যাকআপ করার বেস্ট ম্যাথড গুলো সম্পর্কে জানলেন, এবং বেস্ট অনলাইন ফ্রী ব্যাকআপ সার্ভিস গুলোর সাথে পরিচিত হলেন।

Comments