ছেলেটির সাথে আমার অনেক রাতে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল। সে বেশ বিমর্ষ অবস্থায় তার এক বন্ধুর ম্যাসে যাচ্ছে। কখনো ভাবিনি জীবনের এরকম একটা রাতে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে, জানালো সে। ছেলেটি আমার খূব পরিচিত কেউ ছিল না; তবু এরকম একটা কথা শোনার পর , ‘ঠিক আছে ভালো থেকো’ বলে চলে যাওয়া যায় না। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে আজ রাতে ?
সে জানালো আজ তার বিয়ে। নতুন বাসা নেয়া হয়েছে। ফার্নিচার কেনা হয়েছে। আজ সকালের গাড়িতে তার সম্ভাব্য স্ত্রীর চিটাগাং আসার কথা। সব প্রস্তুতি শেষ। সে আর এল না। সে কেন আসেনি, এই প্রশ্নটা আমার কখনো জানতে ইচ্ছে হয় না। যে আসবে না; তার কাছে না আসার অনেক গুলো যুক্তি থাকবে কিন্তু যে আসার সে কেবল ভালোবাসার জোরেই আসবে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন এক ছোট ভাই ফোন করে খুব কাঁদছিল। অফিস থেকে ছুটি পায় নি। রুমমেটরা সবাই যে যার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। সে একা ফ্ল্যাটে দু দিন না খেয়ে আছে ! একুশ বছরের একটা তরণ ঈদের দিন অচেনা এক শহরে একা একা না খেয়ে পার করছে ! একেকটা জীবন এরকম বিচিত্র রকমের কষ্টে কেন থাকে ?
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য বাবাকে শেষমেশ নিজের কিডনি বিক্রি করতে হয়েছে। আমি একদিন কিডনি বিক্রি করতে আগ্রহী এরকম কিছু মানুষের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করতে শুরু করলাম।আমি জানি এক একটি এগারো ডিজিটের সংখ্যার ভেতরে লুকিয়ে আছে এক একটা আধমরা মানুষের কালজয়ী উপন্যাস। আমি দুর্বল চিত্তের মানুষ তাই সাহস করে আর ফোন করতে পারিনি।
‘নাক ফুলটি বিক্রি করে কিনে নিও আমার কাফনের কাপড়’। বৃদ্ধাশ্রম থেকে এক মায়ের তার সন্তানকে লেখা সেই চিঠির লাইনটি আজও ঘুমাতে গেলে চোখের সামনে ভাসে। কত সংখ্যক মানুষ এই মুহূর্তে হাসপাতালের মৃত্য শয্যা নামক এক বিছানায় শুয়ে আছে? এক একটা রাত সবাই ঘুমিয়ে গেলে কত সংখ্যক মানুষ সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে মৃত্যু প্রস্তুতি নেয় , সেই খবর পত্রিকায় ছাপার অযোগ্যই থেকে গেলো।
ক্যান্সারে আক্রান্ত আরাফাতের মা' কে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এক ছেলের সন্ধান পাই আমি, যে আরাফাতের মায়ের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ক্যাম্পেইন করেছিল। অনেক পরে জানতে পারলাম এই ছেলেটি নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডাক্তার বলে দিয়েছে সে বড় জোর আর ছয় মাস বাঁচবে ! একটা মানুষ জীবনের শেষ ছয়টা মাস অন্য একটা মানুষকে বাঁচাবার জন্য রাস্তায় রাস্তায় রোদে পুড়ে ভিক্ষা করছে। কতটা পূর্ণ হলে এরকম একটা মানুষ হওয়া যায় ?
রাস্তায় বের হলে এই যে এত মানুষ দেখছেন, রিকশায়, বাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাজারে গিয়ে দরদাম করছে, বিশ্বাস করুন এদের অনেকেই আত্মহত্যা করার চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যত মানুষ আত্মহত্যা করছে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে সফল হয় নি এবং তার চাইতেও কয়েক গুণ বেশি সংখ্যক মানুষ সাহসের অভাবে চেষ্টাটাও করতে পারছে না।
মানুষ একদিনে আত্মহত্যা করে না, আত্মহত্যা করার আগে সে অনেকবার সিগন্যাল দিয়ে যায়। সে হয়ত কাউকে প্রাণখুলে কিছু বলতে চেয়েছিল , সে যখন ক্রমাগত বলেই যাচ্ছিল, বেঁচে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না তখন সেটা একটা বাঁচার সংকেত ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, যত মানুষ আত্মহত্যা করেছে তাদের ৮০ ভাগই আত্মহত্যার পূর্বাভাস দিয়ে গেছে, আপনার আমার গুরুত্ব পায়নি বলেই মরতে হয়েছে তাদের।
Zunayed evan
Habibur Rahman
Yorum Sil
Bu yorumu silmek istediğinizden emin misiniz?